অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের ছত্রছায়ায় ময়মনসিংহে নির্ভিঘ্নে মাদক বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে মন্ত্রীর ভাতিজা ও শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুর রাজ্জাক উষান। মন্ত্রীর আত্মীয় হওয়ার সুবাদে তার এমন অপকর্মের বিরোধীতা করার সাহসও কেউ পাচ্ছে না। একই কারণে চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও।
জানা গেছে, ময়মনসিংহে মাদকের সফল ডিলার হিসেবে উষানের রয়েছে একক আধিপত্য। মন্ত্রীর ভাতিজা হওয়ায় প্রশাসনও তার কিছুই করতে পারছে না। অন্যদিকে, ধর্মমন্ত্রীর ছেলে ও আগামী দিনের এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী মুহিতুর রহমান শান্ত’র নাম ব্যবহার করেও তার মাদকের রাজ্য দিন দিন সম্প্রসারিত করেছে সে।
ময়মনসিংহে রীতিমতো ‘পারিবারিক’ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেছেন ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান। মন্ত্রীর পরিবারের অন্তত ১৮ জন সদস্য ও আত্মীয় আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদধারী নেতা। তার পুত্রের হাতে দলের নিয়ন্ত্রণ। এ বলয়টি ফ্যামিলি লীগ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এই বলয়ের নেতারা তাদের প্রতাপ খাটিয়ে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ সকল অপকর্ম সংগঠিত করে যাচ্ছে।
এদিকে মন্ত্রীর ভাতিজা ফয়জুর রাজ্জাক উষান শুধু মাদক ব্যবসাই নয়, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অস্ত্রবাজি এমনকি দলীয় কর্মী খুনের সঙ্গেও জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বছরের শুরুর দিকে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আশফাক আল রাফী শাওন হত্যার সাথে জড়িত এই উষান। অন্য আসামীরা গ্রেফতার হলেও সে দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে ময়মনসিংহ শহর ছাত্রলীগ বর্তমানে গ্রুপিং, কোন্দল, আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজী নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, অস্ত্র ও ক্যাডারবাজী, বালু মহাল আধিপত্য, সদর সাব-রেজিস্ট্রী অফিসে চাঁদার নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি নানা অপকর্মে জর্জরিত। এসবের প্রধান হোতা শহর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন আরিফ ও সাধারণ সম্পাদক ফয়জুর রাজ্জাক উষান। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে রয়েছে দ্বন্দ্বও।
সভাপতির অগোচরে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা কমিটির পদের লোভ দেখিয়ে ব্যাপক অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে উষানের বিরুদ্ধে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সফল পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার নাছির উদ্দিনকে হাসপাতাল থেকে সরানোর জন্য টেন্ডার হিসেবে ব্যাবসায়ীদেরকে অফার করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গত বছরের নভেম্বরে এক প্রোগ্রামে যাওয়ার সময় রাস্তায় শোডাউনে উষানের কপালে চুমু দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। এরপর থেকে আরো বেশি আলোচনায় চলে আসে উষান। সাথে সাথে তার অপকর্ম আর প্রভাবও বৃদ্ধি পেতে থাকে। এখন প্রশাসন থেকে শুরু করে কাউকেই পরোয়া না করে সে চালিয়ে যাচ্ছে তার মাদক বাণিজ্যসহ সকল অপকর্ম।
এলাকায় নতুন রাস্তা তৈরির কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারকে রাস্তায় টাকা না ফেলে তার পকেটে টাকা ফেলার জন্য হুমকী দেয় ছাত্রলীগ নেতা উষাণ। তাকে চাঁদা না দেয়ায় রাস্তার কাজ করতে দেয়া হচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেছেন ঠিকাদার ও স্থানীয়রা। এলাকার সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডই থমকে যায় তাকে চাঁদা না দিলে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ময়মনসিংহে মাদকের প্রধান ডিলার ফয়জুর রাজ্জাক উষান। এই মাদক তরুণ সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে মাদকের প্রতি আশক্তি বেড়ে যাওয়ায়। প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ও মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে সে মাদকের রাজ্যে একক আধিপত্য কায়েম করেছে। মাদকের কারণে সংগঠিত হচ্ছে হত্যা-রাহাজানি। মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর চলমান অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে এলাকাবাসী অবিলম্বে ময়মনসিংহের মাদকের প্রধান হোতা উষানকে গ্রেফতারের আহ্বান জানিয়েছেন।