অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
যারা নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা সাধারণত দুইটি মারাত্মক ভুল করে থাকে। প্রথমত: তারা কখনো ইতিহাসের দিকে তাকায় না। যুগে যুগে স্বৈরাচারী শাসকরা ক্ষমতার অপব্যবহর করে যে এক পর্যায়ে এসে ইতিহাসের নির্মম পরিণতির শিকার হয়েছে সেটার দিকে তাকায় না। আর একবারও চিন্তা করে না যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্যায় অপকর্মের জন্য নিজেদেরকেও একদিন পরিণাম ভোগ করতে হবে।
বিশেষ করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে যারা ইসলাম বা ইসলামি দলকে নির্মূল করার চেষ্টা করেছে তাদের নাম শুধু ইতিহাসের কালো অধ্যায়েই লেখা রয়েছে না, একটি পর্যায়ে এসে তারা ইতিহাসের এক নির্মম পরিণতির শিকার হয়েছেন। ইতিহাসে এমন শত শত উদাহরণ রয়েছে।
এর একেবারে সর্বশেষ উদাহরণ হলেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও কথিত গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার এবং ঘাদানি কমিটির সদস্য ও অপকর্মের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে অব্যাহতি পাওয়া ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সরকারের অতি চাটুকারিতা করতে গিয়ে আইনের শাসন, মানবাধিকার ও রাষ্ট্রের সংবিধানকে পদদলিত করে একতরফা ট্রায়ালের মাধ্যমে কথিত যুদ্ধাপরাধের ভিত্তিহীন অভিযোগে একের পর এক জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। বিশেষ করে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় নিয়ে বিচারপতি নাসিমের স্কাইপি কথোপকতন ও জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিষয়ে সিনহা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সঙ্গে যে কথোপকতন করেছেন সেটা বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এক মহা কেলেংকারি। আর মীর কাসেম আলীর রায়ের আগেতো এসকে সিনহা রাষ্ট্রপক্ষকে বলেছিলেন যে, আপনারাতো কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেননি।
এত কিছুর পরও এসকে সিনহা জামায়াতের শীর্ষ নেতাদেরকে অন্যায়ভাবে ফাঁসিতে ঝুলানোর হুকুম দিয়েছিলেন। আর ফাঁসির রায়গুলোও কার্যকর করা হয়েছে সম্পূর্ণ অমানবিক কায়দায়। জামায়াত নেতাদের ছেলে-মেয়েদেরকেও তাদের বাবার লাশটি ঠিকমতো দেখতে দেয়া হয়নি।
কিন্তু, সেই এসকে সিনহা আজ কোথায়? দেশেই থাকতে পারলেন না। যাদের দালালি করতে গিয়ে অন্যায়ভাবে জামায়াত নেতাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন, তারাই আজ তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করেছে। জামা-কাপড় গোছানোরও সময় দেয়া হয়নি। দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় নিজের স্ত্রীকেও সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেননি। এটাকেই বলে ইতিহাসের নির্মম পরিণতি।
এরপর, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ডা. ইমরান এইচ সরকারও সরকারের টোপে পড়ে জামায়াত বিরোধী অবস্থান নিয়েছিলেন। শাহবাগে একদল ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিককে নিয়ে আসর বসিয়ে জামায়াত নেতাদের ফাঁসির দাবি তুলেছিলেন। এই শাহবাগ থেকে সারাদেশে অন্যায় অপকর্মের বিষ বৃক্ষ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।
আর পরে যা ঘটলো তাও দেশবাসীর চোখের সামনে স্পষ্ট। যাদের ইন্ধনে জামায়াত নির্মূলের আন্দোলন করেছিল পরে তাদের হাতেই দফায় দফায় মার খেতে হয়েছে তাকে। রাস্তা-ঘাটে খেতে হয়েছে জুতাপেটা। রক্ষা পাওয়ার জন্য সরকারি দলের মন্ত্রীর মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। এসকে সিনহার মতো ইতিহাসের নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হয়েছেন ইমরান সরকারও।
সর্বশেষ জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করতে গিয়ে নিজেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেন ঘাদানি কমিটির সদস্য ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের সদস্য ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। তিনি যদি পারতেন তাহলে আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই জামায়াত নেতাদেরকে গলাটিপে হত্যা করতেন। কিন্তু, শেষ পরিণামটা তার জন্য মারাত্মক অপমানজনক। যারা জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করতে তুরিনকে দিয়ে এসব অপকর্ম করিয়েছিল তারাই আজ ব্যবহারের পর তাকে টিস্যুর মতো ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।
বিচারপতি এসকে সিনহা, ইমরান সরকার আর তুরিন আফরোজ তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে জামায়াতে ইসলামীর নিরপরাধ নেতাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে এদেশ থেকে ইসলাম ও ইসলামি দলের নাম নিশানা মুছে ফেলার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। যাদের জন্য তারা এসব করেছেন তারাই তাদেরকে অপদস্ত করেছেন। এটাকেই মনে হয় বলে ইতিহাসের কঠিন বাস্তবতা।