উ শি মং (৬৭), বাংলাদেশের একজন বৌদ্ধ নেতা। মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের মদদ দেওয়ার অভিযোগে গত ১৯ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। পরে তাকে বিমানবন্দর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) আদালতের মাধ্যমে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। উ শি মং -এর স্ত্রী মিরা রাজা লিন আরাকান লিবারেশন পার্টির (এএলপি) একজন সিনিয়র নেতা। রাখাইনে নারীদের একটি সংগঠনেরও প্রধান তিনি। মিরা রাজা লিন আগে ছিলেন একজন গেরিলা নেতা। উ শি মং-এর কাছ থেকে যে ল্যাপটপটি জব্দ করা হয়েছে, সেই ল্যাপটপে স্ত্রী লিনের সশস্ত্র ছবিও পেয়েছে পুলিশ।
এছাড়া আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে পুলিশের হাতে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলেও ধারণা পুলিশের। তবে তার স্বজনদের দাবি, উ শি মং একজন সমাজ সেবক। তাকে ট্র্যাপে ফেলা হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের হেফাজতে থাকা বৌদ্ধ নেতা উ শি মং-এর বোন এথিন রাখাইন কক্সবাজার আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর তিনি (এথিন) চট্টগ্রাম থেকে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। এথিন রাখাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তার ভাই উ শি মং একজন বয়োবৃদ্ধ সমাজসেবক। ‘রাখাইন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন’ নামে একটি এনজিও চালান উ শি মং। বৌদ্ধ ও মুসলিমসহ সব ধর্মের লোককেই সাহায্য করার চেষ্টা করেন তিনি।’
এথিন রাখাইন আরও বলেন, ‘তার ভাই উ শি মং এর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাকে ট্র্যাপে ফেলা হয়েছে। তিনি কোনও ধরনের সন্ত্রাসী বা উগ্রগোষ্ঠীর সঙ্গেও জড়িত নন।’ ভাইয়ের স্ত্রী মিরা রাজা লিনের সশস্ত্র ছবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সেটা অনেক পুরনো। তাদের বিয়ের আগের ছবি। বর্তমানে লিন রাখাইনে শান্তির জন্য কাজ করেন। তিনি মিয়ানমারেই থাকেন। স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতেই মিয়ানমারে যাচ্ছিলেন তার ভাই। প্রায়ই তিনি স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে মিয়ানমার যান।’ এথিন রাখাইন বলেন, ‘তারা এদেশের নাগরিক। তাদের জন্মও এদেশেই। ’
উ শি মং এর এক নিকটাত্মীয় জানান, রাখাইন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বরগুনা, পটুয়াখালী এবং কক্সবাজার এলাকায় কাজ করে। তিনি ওইসব এলাকায় স্কুল, মাদ্রাসা ও মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। বাংলাদেশে তার ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্প কারাখানাও রয়েছে। মং-এর স্ত্রী আরাকান লিবারেশন পার্টির (এএলপি) নেতা। ওই দলটি মিয়ানমারে কোনও নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। বর্তমানে এএলপি মিয়ানমারে শান্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। উ শি মং-এর স্ত্রী সেখানে শান্তির জন্য একজন সমঝোতাকারী হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু মং-এর সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নাই। কারণ মং বাংলাদেশেরই নাগরিক ও থাকেনও এদেশেই।
বৌদ্ধ নেতা উ শি মং এর বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর বিমানবন্দর থানার ওসি নূর ই আজম মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আটকের পর মং এর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এরপর তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) আদালত তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আজ (বৃহস্পতিবার ) রাতেই তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
ওসি নূর ই আজম মিয়া আরও বলেন, ‘তার কাছ থেকে যে ল্যাপটপটি জব্দ করা হয়েছে, সেটিতে বেশ কিছু তথ্য ও ছবি পাওয়া গেছে। ওইসব ছবির মধ্যে সশস্ত্র অবস্থায় তার স্ত্রীর ছবিও রয়েছে। এছাড়া, তিনি মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলের স্বাধীনতাকামীদের অর্থের যোগানদাতা বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। সবগুলো বিষয় খতিয়ে দেখা হবে।’
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং উগ্র বৌদ্ধপন্থীদের হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গা মুসলিমরা। জাতিসংঘের হিসাবে গত দু’মাসে এপর্যন্ত ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post