অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মিয়ানমার বাহিনীর হত্যা-নির্যাতন থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার টার্গেট নিয়েই এবার জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু, প্রথম ধাপেই তিনি বড় ধরণের ধাক্কা খেয়েছেন। আর সেই ধাক্কাও দিয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রাম্পের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলেও ট্রাম্প কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। যদিও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক প্রেস ব্রিফিং করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপকালে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের কেরি দর্শনের মতো ঘটনা ঘটলো। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও বাংলাদেশ সফরে আসার পর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে রওশন এরশাদ গিয়েছিলেন সাক্ষাৎ করতে। কিন্তু, জন কেরি কোনো কথা বলেন নি। তারপরও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে কেরির সঙ্গে রওশনের বৈঠক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ট্রাম্প দর্শনের ঘটনাও একই রকম হলো।
সোমবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মূল অধিবেশন শুরুর আগে সংস্থাটির অবকাঠামো সংস্কার নিয়ে একটি আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনা শেষে বের হয়ে যাওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কিছুক্ষণের জন্য থামান। তাদের মধ্যে ১-২ মিনিট কথা হয়েছে। কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও এটার লাইভ প্রচার করেছে। হয়তো রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোও গুরুত্বের সঙ্গে খবরটি প্রচার করেছে।
মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম তাদের অনলাইন ভার্সনে পররাষ্ট্র সচিবের বরাত দিয়ে প্রচার করেছে যে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। এর কিছুক্ষণ পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্স। রয়টার্সের নিউজ প্রকাশিত হওয়ার পর পরই বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো তাদের নিউজ প্রত্যাহার করে নেয়।
শেখ হাসিনা রয়টার্সকে বলেন, গত সোমবার জাতিসংঘে এক বৈঠক শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শেখ হাসিনা ট্রাম্পকে কয়েক মিনিটের জন্য থামিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ( ডোনাল্ড ট্রাম্প) শুধু জিজ্ঞেস করেছিলেন, বাংলাদেশ কেমন আছে? আমি বলেছিলাম, ‘ভালো, তবে আমাদের একমাত্র সমস্যা মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীরা। কিন্তু শরণার্থীদের নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।
শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন, শরণার্থীদের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান পরিষ্কার। সেজন্য রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের বিষয়ে ট্রাম্পের সহায়তা চেয়ে কোনও কাজ হবে না। তিনি বলেন, আমেরিকা ঘোষণা করেছে যে তারা শরণার্থীদের গ্রহণ করবে না। আমি তাঁর কাছ থেকে কী আশা করতে পারি? বিশেষ করে প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে। তিনি এরই মধ্যে তার মনোভাব প্রকাশ করেছেন। সুতরাং আমি তাকে কেন জিজ্ঞেস করতে যাবো?
কিন্তু, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার শামীম আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।
রয়টার্সকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার ও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের প্রেস ব্রিফিং নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার কথায় সাড়া দেয়নি। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন ট্রাম্প বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।পররাষ্ট্র সচিবের বক্তব্য নিয়ে এখন সমালোচনার ঝড় উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মান রক্ষার্থে পররাষ্ট্র সচিব মিথ্যাচার করেছেন বলেও কেউ কেউ মন্তব্য করছেন।
এদিকে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের অধিবেশনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ দেয়া প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আর সম্ভব হবে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই যখন প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দেয়নি, অন্যরা কতটুকু সাড়া দেবে এটা থেকেই বুঝা যায়।
সম্প্রতি এক বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘আমরা দেখতে চাই, আপনি কত শক্তিশালী, কত ক্ষমতাশালী, সংসদে গিয়ে নয়, জাতিসংঘে গিয়ে তার প্রমাণ দেবেন এবার। রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে আপনাকে চাপ তৈরি করতে হবে। এজন্য আপনাকে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করতে হবে।’ মান্নার এই চ্যালেঞ্জ গ্রহনে শুরুতেই ব্যর্থ হলেন শেখ হাসিনা।
Discussion about this post