নোয়াখালী প্রতিনিধি, অ্যানালাইসিস বিডি
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষক ও প্রক্টর মুশফিকুর রহমান এর বিরুদ্ধে ধর্মপালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের এই শিক্ষক রুটিন করে সুপরিকল্পিত ভাবে ছাত্রদের ধর্মপালনে প্রতিনিয়ত বাধা দিচ্ছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার (২৫ আগস্ট) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্লাস টেস্ট নেওয়ার কথা জানায়। ক্লাস টেস্ট নেওয়ার জন্য ওই শিক্ষক সময় সময় বেঁধে দেয় দুপুর ১২:৩০ টায়। ক্লাস করাতে করাতে নামাজের সময় হয়ে যাওয়ায় ক্লাসে থাকা মুসলিম শিক্ষার্থীরা নামজের বিরতি দিতে বলে। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কথায় কর্নপাত না করে ক্লাস নিতে থাকেন এবং ১:৪৫ টায় মিনিটে ক্লাস শেষ করেন। ততক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজ শেষ হয়ে যায়। এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বিষয়টা অভিযুক্ত শিক্ষকের পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। ধর্মপালনে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত বাধার মুখে পড়ায় অনেক শিক্ষার্থীকেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এই ধরনের অভিযোগ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নতুন নয়। বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের ধর্ম পালনে নিয়মিত ভাবেই বাধা দিয়ে আসছিল ইংরেজি বিভাগের এই শিক্ষক।
আরো জানা যায় সম্প্রতি নোবিপ্রবি শিক্ষক মুসফিকুর রহমান প্রকাশ্যেই ধর্মপালনকারী শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে নানা ভাবে হেনস্তা করছেন। নানান ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ফুড টেকনোলজি বিভাগের এক শিক্ষার্থীর (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) সাথে কথা বললে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অ্যানালাইসিস বিডিকে জানায়, দাড়ি রেখে সে নিয়মিত ক্লাস করে। সম্প্রতি অভিযুক্ত শিক্ষক মুশফিকুর রহমান ক্লাস নিতে আসেন। শিক্ষার্থীর দাড়িতে হাত দিয়ে ওই শিক্ষক বলেন, “এই ময়লা গুলো তুমি ইচ্ছে করে রেখেছ? নাকি হয়ে গেছে পরে ফেলে দিবা?” এমন বিব্রতকর প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। উত্তরে ওই শিক্ষার্থী “আমি রেখেছি” বলে জবাব দেয়। তারপর ধর্মদ্বেষী ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীকে দাড়ি রাখার কয়েকটা উপকারিতা বলতে বলে। এমন প্রশ্নে তাৎক্ষণিক যথাযথ উত্তর দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে কড়া ভাবে শাসান অভিযুক্ত শিক্ষক। এবং দ্রুত দাড়ি কেটে ফেলার কথা বলেন।
ফার্মেসি বিভাগের এক শিক্ষার্থী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) অভিযোগ করে অ্যানালাইসিস বিডিকে বলেন, স্যারের ক্লাসে যোহরের সময় চলে যাচ্ছিলো। নামাজের পড়ার জন্য ছুটি চায় ওই শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত শিক্ষক ছুটি না দিয়ে উল্টো নামাজের কথা বলায় তার উপর চড়াও হয় এবং নানান কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে।
এছাড়াও নানান সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে বেরিয়ে আসে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যায়, প্রক্টর মুশফিকুর রহমান শিক্ষার্থীদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন যাতে কেউ তাকে সালাম না দেয়। কোন শিক্ষার্থী ‘ইনশাআল্লাহ’ বললে তিনি এটিকে “বিরক্তিকর শব্দ” বলে আখ্যায়িত করেন বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।
এদিকে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী কয়েকজন শিক্ষার্থীও এই প্রতিবেদককে জানায়, ধর্মীয় যে কোন শব্দ তারা ওই শিক্ষকের সামনে বলতে বারন করেছেন। কারন হিসেবে এগুলা উনি একদম পছন্দ করেন না বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও জানা গেছে নানান সময় বোরকা পরা মেয়েদের দেখিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক বলেন, “তোমরা এমন পোশাক পরছো কেন? এই থেকে বুঝা যায় ছেলেরা কত হিংস্র!” এছাড়াও মেয়েদের বোরকা না পড়ে আসতে প্রভাবিত করেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিক্ষক মুশফিকুর রহমানের সহকর্মীদের অভিযোগ রমজান মাসেও তিনি প্রকাশ্যে গর্বসহকারে খাবার খেতেন।
এদিকে নোবিপ্রবি শিক্ষক ও প্রক্টর মুসফিকুর রহিমের এমন ধর্মদ্বেষী মনোভাব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রকাশ হতে থাকায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন মহলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জানায়, “শিক্ষক হিসাবে আমরা আপনার ছাত্র নাস্তিক হিসাবেও আমরা অনুগত হবো এমনটি ভেবে যে কার্য আপনি পরিচালনা করছেন তা নিতান্তই ইসলাম এবং ইসলামি অনুশাসনকে চ্যালেঞ্জ করার মত।”
আরেকজন শিক্ষার্থী লিখেন- “আমার জানা মতে নাস্তিক হওয়াটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার, কিন্তু আপনার এই নাস্তিকতার অন্তরালে ইসলাম এবং অন্যান্য ধর্মদ্বেষী মনোভাব এবং তা সাধারন ছাত্রদের উপর প্রয়োগ মেনে নিতে পারছি না।”
নাস্তিক, আস্তিক, মুসলমান,হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং উপজাতিদের সহাবস্থান নিয়েই একটি বিশ্ববিদ্যালয়। তাই শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাসে ধর্ম পালনে বাধা দেয়াটা মেনে নিতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি শীঘ্রই যাতে ওই শিক্ষক প্রকাশ্যে কিংবা অন্তরালে ধর্ম পালনে বাধার কারণ না হয়। সকল ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় অনুভুতিসহ ক্যাম্পাসে থাকতে চায়, নির্ভিঘ্নে ধর্ম পালন করতে চায়। কোন শিক্ষক যাতে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় বাধা না হয়ে দাঁড়ায় সে দাবি সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
Discussion about this post