অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দীর্ঘ ৯ বছর যাবত রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে অবস্থান করছে বিএনপি। প্রথম দিকে ৫ বছর সংসদে বিরোধীদলের আসনে থাকার সুযোগ হলেও বর্তমান দলটি শুধু রাজপথের বিরোধীদল। আর রাজপথেও এখন তাদের কোনো তৎপরতা নেই। জনস্বার্থতো দূরের কথা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যও দলটির নেতাকর্মীরা রাজপথে নামতে পারছে না। প্রেস ক্লাব আর বিভিন্ন হলরুম কেন্দ্রীকই চলে তাদের কর্মসূচি। বলা যায়, তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা বিএনপি এখন ঘরোয়া পার্টিতে পরিণত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির বর্তমান দূরবস্থার পেছনে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, নেতাদের সরকারের এজেন্ট হয়ে কাজ করার পাশাপাশি কিছু বুদ্ধিজীবীদেরও ভুমিকা রয়েছে। বিএনপিপন্থী এসব বুদ্ধিজীবী মাঝে মধ্যে সরকারের এজেন্ট হয়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিভ্রান্তমূলক পরামর্শ দেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এমাজউদ্দিন আহমদ ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর পরামর্শে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণেই আজ দলের এই করুণ অবস্থা হয়েছে বলে দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অভিযোগ।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত যে আন্দোলন শুরু করেছিল তা বন্ধের নেপথ্যে কাজ করেছে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরা। সরকারই তাদেরকে এ কাজে ব্যবহার করেছিল। এই এমজাউদ্দিন গ্রুপই সেদিন খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, জামায়াতকে নিয়ে এভাবে আন্দোলন করলে সব নাশকতার দায় আপনাদের ঘাড়ে চাপবে। আন্তর্জাতিক মহলেও আপনাদের সুনাম নষ্ট হবে। বরং সরকার আরেকটি মধ্যবর্তী নির্বাচন দেবে, আন্দোলন করার আর দরকার নেই। তাদের পরামর্শেই তৃণমূলে গড়ে উঠা সেই আন্দোলন স্থগিত করেছিলেন খালেদা জিয়া।
পরে অবশ্য খালেদা জিয়া তার ভুল বুঝতে পেরেছেন। কয়েক মাস পরই কিশোরগঞ্জে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় ভুল স্বীকার করে বলেছিলেন যে, আন্দোলন বন্ধ করা ভুল ছিল। সম্প্রতি গুলশান কার্যালয়েও এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আন্দোলন স্থগিত করা ভুল ছিল।
অপরদিকে, বিএনপি থেকে জামায়াতকে সরানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন দুই বুদ্ধিজীবী এমাজউদ্দিন আহমদ ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এমনকি তারা প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশেও জামায়াতকে ছাড়ার জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদের পেছনে সরকারের কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে। জানা গেছে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ নীতিনির্ধারণী ফোরামের কয়েকজন সদস্য এসব বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শেই সব করছেন। জামায়াতের পরামর্শে যাতে বিএনপি আর কোনো আন্দোলনে না নামে সেজন্য এমাজউদ্দিন গ্রুপ সার্বক্ষণিক বিএনপি নেতাদেরকে পরামর্শ দিচ্ছেন।
বিএনপির ত্যাগী নেতারা মনে করছেন, বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শে রাজপথের আন্দোলন বাদ দিয়ে শুধু বিদেশিদের ওপর নির্ভর করে থাকলে সরকারের পতন হবে না। বুদ্ধিজীবীদের কথা মতো ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) কাজ করার কারণেই আজ দলের এই অবস্থা। বুদ্ধিজীবীরাই দলকে ডুবাচ্ছে। খালেদা জিয়া যখন আবার সরকার বিরোধী আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন সরকারের এজেন্ট হয়ে বুদ্ধিজীবীরা আবারও তৎপর হয়ে উঠছে।
Discussion about this post