সারাদেশে বেপরোয়া গ্রেপ্তার, হয়রানি আর ধরপাকড়ে ধানের শীষের সমর্থক ও নেতাকর্মীদের কাছে এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে পুলিশের পাইকারি গ্রেপ্তার অভিযানে নিজেদের বাড়ি ঘর তো দূরের কথা ধান ক্ষেত, বিলেও নিরাপদে থাকতে পারছেন না বিরোধী নেতাকর্মীরা। সরকারের নির্দেশে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তারে চিরুনি অভিযান শুরু করেছে বলে ইতিমধ্যে অভিযোগ করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রণ্ট। বিএনপি বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির ১০ হাজার ৩২৯ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অবশ্য পুলিশ বরাবরই বলে আসছে, শুধুমাত্র যাদের বিরুদ্ধে ফৌজধারি অভিযোগ রয়েছে তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নিরাপরাধ কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
শুক্রবার বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, গত ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর হতে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১০ হাজার ৩২৯ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। দায়েরকৃত গায়েবি ও মিথ্যা মামলার সংখ্যা ৮৪৪টি। এসময় বিএনপি ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হওয়া মোট হামলার সংখ্যা ২ হাজার ৮৯৬। এসব হামলায় আহতের সংখ্যা ১৩ হাজার ২৫২ জন এবং নিহতের সংখ্যা ৯ জন।
তিনি জানান, কেবল বৃহস্পতিবারই বিভিন্ন জেলায় বানোয়াট মামলা দায়ের করা হয়েছে ৩৮টি, আটক করা হয়েছে ১ হাজার ১২৭ জন নেতাকর্মীকে, হত্যা করা হয়েছে ১ জনকে।
শুক্রবার সিলেট-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী বলেছেন, ওয়ারেন্ট ছাড়াই তার ২০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ৩ দিনে কুমিল্লা-৩ আসনে বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিএনপির ৪০ এজেন্টকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি প্রার্থী কে এম মজিবুল হক । ঝিনাইদহে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ১৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দিনাজপুর-১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াতের মওলানা মোহাম্মদ হানিফ ও বীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কেএম কাওসারসহ ১৯৯ জনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব খানকে আটক করেছে পুলিশ।
ঢাকা-২ আসনে খোদ বিএনপি প্রার্থীর বাড়ি থেকে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। মেহেরপুরে আটক করা হয়েছে ২৩ জনকে। খুলনায় বিএনপি প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্টকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শুক্রবার।
বিএনপি রুহুল কবির রিজভী বলছেন, জেলায় জেলায় বেপরোয়া আটক অভিযানে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িছাড়া করা হচ্ছে। আর দাবি করা হচ্ছে- বিএনপি নাশকতা করছে।
এসব গ্রেপ্তার, হয়রানির বিষয়ে ঐক্যফ্রণ্টের সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক জগলুল হায়দার আফ্রিক শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী, নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মাঠে দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, প্রার্থী-নেতা-কর্মী-সর্মথকদের ওপর দমন-পীড়ন থেমে নেই। সহিংসতা চলছেই। ভীতিকর অবস্থার কাক্সিক্ষত উন্নতি বা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বারবার নির্বাচন কমিশনকে বলার পরও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আক্রমণাত্মক ভূমিকার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি। বরং দিনকে দিন বেড়েই চলেছে আক্রমণের ধরন।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা এজেন্ট কর্মীদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নারায়ণগঞ্জ-১ রূপগঞ্জ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির। তিনি বলেছেন, রাত হলেই সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশ ও পোশাকধারী পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে। কর্মীকে খুঁজে না পেলে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাদের পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনদের। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ নিয়ম বহিভূর্তভাবে তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৫ টি গায়েবী মামলা দেয়া হয়েছে। এসব মামলায় উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৪৮৩ জনকে আসামি করা হয়।
ঐক্যফ্রন্টের খুলনা মহানগর শাখার সমন্বয়ক ও মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘পুলিশ ও ডিবি আতঙ্কে নির্বাচনী অফিসগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে। সন্ধ্যার পর সেখানে অন্ধকার থাকে। নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৪ গোষ্ঠিকেও তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে পুলিশ। পুলিশের নির্দেশনায় সব কিছু পরিচালিত হচ্ছে। পুলিশি নির্বাচন হচ্ছে। মহিলাকর্মীদের ডেকে এলাকা ছেড়ে যেতে বলা হচ্ছে।’
মঞ্জু আরও বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তাহীন। কারাগারে ঠাঁই নাই। জামিনে থাকা মামলার জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে। আমরা অসহায়।’
সূত্র: শীর্ষকাগজ