অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আসন্ন একাদশ নির্বাচনের ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনীতির মাঠ ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। নির্বাচনী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। প্রথম দিকে বিরোধী জোটের প্রার্থীদের প্রচার মিছিল, পথসভা ও নির্বাচনী অফিসে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলেও তিন দিন ধরে বেছে বেছে প্রার্থীদের ওপর হামলা করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শুধু গত দুই দিনে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় বিএনপির কমপক্ষে ৫ জন প্রার্থী রক্তাক্তসহ ১৫ জন প্রার্থী আহত হয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে যা নজিরবিহীন ঘটনা। এছাড়া অন্যান্য নেতাকর্মীর ওপর হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও গ্রেফতারতো আছেই।
লক্ষণীয় বিষয় হলো-সবখানেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীদেরকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এমনকি আক্রান্ত বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চাইলে নিরাপত্তা না দিয়ে উল্টো তাদেরকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে নির্যাতন করছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাষ্ট্রের কর্মচারী হলেও তারা এখন সরাসরি নৌকাকে জেতাতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে। গায়ের পোশাকটা ছাড়া এখন পুলিশ আর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। পুলিশ সদস্যরা একটি দলের পক্ষে ভোট চাওয়ার ঘটনা মনে হয় স্বাধীনতার পর আর ঘটেনি। গত সপ্তাহে সাতক্ষীরা কলারোয়া থানার ওসি মারুফের নৌকায় ভোট চাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এনিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে যায়।
সোমবার পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মোস্তাফিজ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদেরকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যদি তারা এলাকা ছেড়ে চলে না যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেয়ারও হুমকি দিয়েছেন তিনি।
গত রোববার সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ওসি কওশিক আহমেদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ জামায়াত নেতার বাড়িতে তাণ্ডব চালিয়েছে। বাসার ভেতর ঢুকে অনেক আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে। সাতক্ষীরায় ধানের শীষের প্রার্থী গাজী নজরুল ইসলামকে আটকের পর মঙ্গলবার তার স্ত্রী ও মেয়েকে অন্যায়ভাবে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ।
সোমবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ-২ আসনের প্রার্থী মেজর আক্তারুজ্জামানকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। কিন্তু, পুলিশ তাকে নিরাপত্তা না দিয়ে উল্টো তার ছেলেসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে গেছে। এরপর সোমবার ঢাকা-১৫ আসনে পুলিশের সহযোগিতায় ধানের শীষের প্রার্থী ডা. শফিকুর রহমানের নির্বাচনী অফিসে হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। তারা কম্পিউটার, নির্বাচনী পোস্টার, লিফলেটসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে গেলেও পুলিশ তাদেরকে কিছু বলেনি। বরং উল্টো ধানের শীষের কয়েকজন সমর্থককে আটক করে নিয়ে গেছে।
মঙ্গলবার বাগেরহাট-৪ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী অধ্যক্ষ আব্দুল আলিমের বাড়ি ঘেরাও করে শতাধিক নেতাকর্মীসহ প্রার্থীকে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ। গাজীপুরে ধানের শীষের প্রচারণা থেকে পিটিয়ে ১০ জনকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। ময়মনসিংহে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালিয়েছে পুলিশ। এখানে সাংবাদিকসহ অনেক আহত হয়েছে। পুলিশের বাধায় ঢাকা-৮ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী আফরোজা আব্বাস প্রচারেই নামতে পারছে না।
এদিকে, সারাদেশে এমন সহিংসতার মধ্যেও সেদিন পুলিশের মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী বললেন- দেশে নাকি নির্বাচনের চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে। আর মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিঞা বলেছেন, যারা নির্বাচনী প্রচারে নামছে না, এটা তাদের রাজনৈতিক কৌশল। প্রশাসনকে চাপে রাখতে তারা এসব করছে। একাদশ নির্বাচনের মাঠ দেখে মনে হচ্ছে বিএনপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এখন পুলিশ, আওয়ামী লীগ নয়।
এখন লক্ষণীয় বিষয় হলো- পুলিশের এসব অন্যায়-অপকর্মের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করার পরও কিছু হচ্ছে না। বরং প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদাও দাবি করছেন দেশে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে। মঙ্গলবার ঐক্যফ্রন্ট পুলিশের বিভিন্ন হামলা হয়রানির অভিযোগ জানাতে গেলে সিইসি উল্টো পুলিশের সাফাই গেয়েছে। এনিয়ে ড. কামালের সঙ্গে সিইসির উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। শেষে তারা বৈঠক থেকে উঠে চলে এসেছে। আর কমিশনার রফিকুল ইসলামতো বলেই দিয়েছেন যে, মারামারি রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ।
সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে বলা যায়- ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে জেতাতে ভোটের মাঠে এখন পুলিশ ও নির্বাচন কমিশন একাকার হয়ে গেছে। তারা এখন একজোট হয়ে মাঠে নেমেছে।