ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী ও সদ্য বিদায়ী নেতারা গণভবনের বৈঠকেও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, বুধবার (৪ জুলাই) রাতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রীর সামনে ছাত্রলীগ নেতাদের বক্তৃতার এক পর্যায়ে পক্ষ-বিপক্ষের সৃষ্টি হলে উত্তেজনা শুরু হয়। এসময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)-এর সদস্যরা তাদের নিবৃত করেন। মতবিনিময় শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জানান, কমিটি ঘোষণা করতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। কমিটি ঘোষণার পর সবাইকে তা মেনে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৈঠক শেষে বুধবার (৪ জুলাই) দিবাগত রাতে এসব তথ্য জানা গেছে। এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, নিজেদের বক্তৃতা দেওয়ার সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে আবেগঘন কথা বলেন নেতারা। নেত্রীর প্রতি আনুগত্যের প্রশ্নে সবাই নিজেকে নিবেদিত প্রাণ বলে দাবি করেন। এসময় আবেগে কেঁদেও ফেলেন অনেক নেতা।
সূত্র আরও জানায়, আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হলেও বিশৃঙ্খলাও সৃষ্টি করেছেন নেতারা। এসময় ছাত্রলীগ নেতাদের আরও সুশৃঙ্খল হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন শেখ হাসিনা।
জানা যায়, ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন পদপ্রত্যাশী নেতা সোহান। এসময় সোহানের ওপর আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী সভাপতি মিজান। এরপর এসএসএফ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এই সভায় ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে মাইক নিয়ে টানাটানি ও হট্টগোল সৃষ্টি হয়। এছাড়াও এক পক্ষের বক্তৃতা দেওয়ার সময় আরেক পক্ষ চিৎকার চেঁচামেচি করেছে।
উপস্থিতিদের সূত্রে আরও জানা যায়, বৈঠকে ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিজ্ঞেস করেছেন- নেতা হিসাবে তাদের কোনও পছন্দের নাম আছে কিনা, থাকলে নাম প্রস্তাব করতেও বলেন তিনি। তখন সব ছাত্রলীগ নেতা সমস্বরে বলেছেন, শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এরপর শেখ হাসিনা বলেছেন- আমি যে সিদ্ধান্ত দেবো তা তোমরা মেনে নেবে? তখন সবাই আবারও উচ্চস্বরে জানান- শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত; চূড়ান্ত, চূড়ান্ত।
প্রসঙ্গত বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়। রাত ৮টা থেকে সোয়া ১১টা পর্যন্ত ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন তিনি।
সূত্র জানায়, এসময় ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে শেখ হাসিনা জানতে চান- এবার এত পদপ্রত্যাশী কেন? জবাবে ছাত্রলীগ নেতারা বলেছেন- আপনি এবার কমিটি করবেন জেনে প্রার্থী হয়েছি। আমরা আনন্দিত কমিটির দায়িত্ব এবার আপনি নিয়েছেন।
এসময় পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতাদের অনেকে বলেন, এতদিন ছাত্রলীগে কোনও গণতন্ত্র ছিল না। ভোট হয়েছে লোক দেখানো। কমিটির দায়িত্ব আপনি নিয়েছেন জেনে আমরা আনন্দিত হয়েছি।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, পদ-প্রত্যাশী ৩২৩ জন নেতার মধ্যে প্রায় ২৫০ জন নেতা শেখ হাসিনার সামনে কথা বলেছেন। এসময় সবাই দলের জন্যে পারিবারিক ঐতিহ্য ও ত্যাগের কথা তুলে ধরেন।
জানা যায়, বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে শেখ হাসিনা বলেছেন- আমি সবার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়েছি। তবে কমিটি ঘোষণা করতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন, আমি যে নেতৃত্ব নির্বাচন করবো তোমরা সবাই তা মেনে নেবে এবং আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। এ মতবিনিময় সভায় ছাত্রলীগ নেতারা ছাড়াও আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন