প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই ভারত সফরে আসছেন। এই সফরে ভারত সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে তার আলোচনা হবে। বাংলাদেশে আগামী সাধারণ নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে দিল্লিতে তার এই সফরকে যথারীতি ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলা ট্রিবিউন জানতে পেরেছে, দিল্লিতে এই সফরে মি. ইমামের সঙ্গে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, পররাষ্ট্রসচিব বিজয় কেশব গোখলে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বা তার ডেপুটি এম জে আকবর তো বটেই— এমন কী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরও আলাদা বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, তিনি দিল্লিতে অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনসহ একাধিক থিংক ট্যাঙ্কেও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে মতবিনিময় করবেন।
হোসেন তৌফিক ইমাম প্রধানমন্ত্রী হাসিনার শুধু একজন উপদেষ্টা মাত্র নন, বলা যেতে পারে তিনি হলেন তার প্রধান ‘রাজনৈতিক ট্রাবলশ্যুটার’। দেশের বা দলের যেকোনও রাজনৈতিক সংকটে বা যেকোনও রাজনৈতিক ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী যে সাবেক এই অভিজ্ঞ আমলার পরামর্শে ভরসা রাখেন, এ কথাও সবার জানা। দিল্লিতে এখন ক্ষমতার অলিন্দে বা বিরোধী দলেও যারা আছেন, তাদের সঙ্গেও এইচ টি ইমামের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। ফলে প্রবীণ ও অভিজ্ঞ এই নেতা নির্বাচনি বছরে দিল্লিতে স্রেফ বেড়াতে বা বক্তৃতা দিতে আসছেন না, এটা ধরেই নেওয়া যায়।
গত জুন মাসেই দিল্লিতে এসেছিল বিরোধী দল বিএনপি’র তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। আর বিএনপি’র সেই ‘ইন্ডিয়া আউটরিচ’ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে জল্পনা-কল্পনাও কম হয়নি। আবার তার কিছুদিন আগেই বিজেপির আমন্ত্রণে দিল্লি থেকে ঘুরে গিয়েছিল আওয়ামী লীগের একটি বিশাল প্রতিনিধিদল, যার নেতৃত্বে ছিলেন দলের মহাসচিব ও কেবিনেট মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ফলে ভোটের বছরে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো যে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে নতুন করে ঝালিয়ে নিতে চাইছে,সে ইঙ্গিত ইতোমধ্যেই স্পষ্ট।
আর এই পটভূমিতেই এইচ টি ইমামের আসন্ন দিল্লি সফর একটা আলাদা মাত্রা পেয়ে গেছে। মনে রাখতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও এইচ টি ইমাম আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীরও সদস্য এবং নির্বাচনি কমিটিরও কো-চেয়ার। ফলে ক্ষমতাসীন দল ও সরকার— দুটোতেই তিনি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আছেন এবং ধরেই নেওয়া যায়, ভারতে নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ সরকার, উভয়েরই প্রতিনিধিত্ব করবেন।
আগামী ৭ জুলাই (শনিবার) দুপুরে তিনি দিল্লির নামকরা স্ট্র্যাটেজিক থিংক ট্যাঙ্ক ‘অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনে’ও (ওআরএফ) বক্তৃতা করবেন। মি. ইমামের ওই বক্তৃতার শিরোনাম হলো ‘বাংলাদেশ-ভারত:ঐতিহাসিক ও সমকালীন দৃষ্টিকোণ’।
ভারতের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী রিলায়েন্সের অর্থায়নেই মূলত চলে এই প্রভাবশালী থিংক ট্যাঙ্কটি– আর ঘরের পাশে বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি নিয়েও তারা নিয়ত গবেষণা করে থাকে। বিশেষত বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রাক্কালে সেখানকার রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে ওই থিংক ট্যাঙ্কে গিয়ে মি. ইমাম কী বলেন বা প্রশ্নোত্তর পর্বে কী জবাব দেন, সে দিকে দিল্লির রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক মহলেরও সতর্ক নজর থাকবে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করবেন ভারতীয় সাবেক কূটনীতিক পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী, যিনি এর আগে ঢাকাতে ভারতের হাই কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়া, মি. ইমাম তার দিল্লি সফরে বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন কিংবা ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের মতো থিংক ট্যাঙ্কেও মতবিনিময় করতে পারেন বলে সম্ভাবনা আছে, যদিও তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এই দু’টি থিংক ট্যাঙ্কই কিছুটা দক্ষিণপন্থী ও ক্ষমতাসীন বিজেপির ঘনিষ্ট বলে পরিচিত। ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের কর্ণধার এবং বিজেপি তথা আরএসএসের প্রভাবশালী নেতা রাম মাধবের সঙ্গেও এইচ টি ইমামের আলাদা বৈঠক হতে পারে।
সব মিলিয়ে এইচ টি ইমামের এই দিল্লি সফর যে ভীষণ হাই-প্রোফাইল একটি সফর হতে যাচ্ছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আর যেহেতু বাংলাদেশের নির্বাচন একেবারে দোরগোড়ায় এবং ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রী হাসিনার অতি বিশ্বস্ত উপদেষ্টা দিল্লিতে আসছেন, তাই এটাকে নিছক একটা রুটিন সফর হিসেবে দেখারও কোনও অবকাশ নেই!
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন