অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আলোচিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে সকাল ৮টায়। চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। সকাল সাড়ে আটটার দিকে গাজীপুরের কলেজ রোড টঙ্গী এলাকায় বছিরউদ্দিন উদয়ন একাডেমি কেন্দ্রে তিনি ভোট দেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ৯ টায় ভোট দেন আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম।
ভোটপ্রদান শেষে হাসান সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ভোট সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে আমার শঙ্কা আছে। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে আমার পোলিং এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেওয়া হচ্ছে। সাদাপোশাকে নেতা–কর্মীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করছে। সব ভোটকেন্দ্রের অবস্থা বোঝার পর বোঝা যাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কি না। যে কৌশলে ভোট নেওয়া হচ্ছে, তাতে কয় শতাংশ ভোট হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’’
হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘জয়ের ব্যাপারে তারপরও আমি শতভাগ আশাবাদী। নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আমার নেতা–কর্মীদের হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অভিযোগ জানানোর জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বারবার ফোন করা সত্ত্বেও তিনি ফোন ধরছেন না।’
নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকবেন কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘নির্বাচন করতে যেহেতু নেমেছি, শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।’
১০ কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ
বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার সাংবাদিকদের অভিযোগ করেছেন, সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে না। ১০টি কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। অন্য কেন্দ্রগুলোতে হয়রানি করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার করেছে।
আড়াই ঘণ্টায় ব্যালট পেপার শেষ!
ভোট গ্রহণের আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১৭নং ওয়ার্ডের মুগর খাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের ব্যালট পেপার। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কেন্দ্রটি দখলে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলমের নৌকা মার্কার লোকজন।
জানা গেছে, ভোটগ্রহণের কিছু সময় পরেই ওই কেন্দ্র থেকে থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের কর্মীরা। পরে তারা কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট নিয়ে নৌকা মার্কায় সিল মারতে থাকেন। বর্তমানে ওই কেন্দ্র ব্যালট পেপার সংকট রয়েছে। কেন্দ্রের বাইরে ভোটাররা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও ব্যালট পেপার না থাকায় সেখানে ভোটগ্রহণ থেমে আছে।
এ কেন্দ্রের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর একজন পোলিং এজেন্ট অভিযোগ করেন, সকাল সাড়ে নয়টার সময় ইসমাইল হাজি, মাইনুদ্দিনসহ আরো একজন ভোট কেন্দ্রে এসে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে জোরপূর্বক সিল ছাপ্পড় মারে যেখানে প্রিজাইডিং অফিসারের কোন স্বাক্ষর নেই।
তিন কেন্দ্রে জাল ভোটের অভিযোগ
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে তিনটি কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্র তিনটি হলো- পূবাইল উচ্চ বিদ্যালয়, কোনাপাড়ার জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, কাশিমপুরের মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানবজমিনকে এক ভোটার জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জোর করে কেন্দ্রে প্রবেশ করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট দিচ্ছেন। কেন্দ্রের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকলেও তারা কিছু বলছেন না।
জাহাঙ্গীরের কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট নেই
আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের নিজ কেন্দ্রে বিএনপি মেয়র প্রার্থীর কোন এজেন্ট পাওয়া যায়নি। কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল সাড়ে ৯ টায় শুধু আওয়ামী লীগ এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্ট দেখা যায়।
এ ব্যাপারে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার তানজুরুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত এ কেন্দ্রে বিএনপির কোন এজেন্ট আসেনি। এ নিয়ে কেউ কোন অভিযোগও করেনি। এ কেন্দ্রে সকাল ৯ টায় ভোট দেন আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম।
উল্লেখ্য, দলীয় প্রতীকে এবারই প্রথম এই সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হচ্ছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও এর ফল প্রভাব ফেলবে জাতীয় রাজনীতিতে। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আবদুল মান্নান এক লাখ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমতউল্লাহ খানকে পরাজিত করেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ৫৭টি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মধ্যে একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাই ৫৭টির মধ্যে ৫৬টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন ও সংরক্ষিত ১৯ নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন এবং একটি মেয়র পদের জন্য সাতজন প্রার্থী এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। মোট ৩৪৫ জন প্রার্থী গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এর আগে গত ১৫ মে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, জালভোট ও অনিয়মের মাধ্যমে ভোট সম্পন্ন হয় এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থী বড় ব্যবধানে জয়ী হয়। তেমন কোনো সংঘর্ষ, ভাংচুর বা কেন্দ্র দখলের মহোৎসব না করেই নীরব ভোট কারচুপির এক নজির স্থাপন করা হয়েছে খুলনার সেই নির্বাচনে। ইসি সেই নির্বাচনকে ‘চমৎকার নির্বাচন’ বললেও দেশের বিশিষ্টজন ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা আর কোথাও যেনো এমন ‘চমৎকার নির্বাচন’ না হয় সেদিকেই ইসিকে তাগিদ দিয়েছেন।